ছেলেরা বিয়ে করে হয় মেয়ের সৌন্দর্য দেখে নয়তো মেয়ের বাবার টাকা পয়সা দেখে

 ছেলেরা বিয়ে করে হয় মেয়ের সৌন্দর্য দেখে নয়তো মেয়ের বাবার টাকা পয়সা দেখে। তা তুই কি দেখে বিয়ে করলি?

রাফির কথায় আমি সহজভাবে উত্তর দিলাম,

--নর্দমার ড্রেন থেকে কুকুরের বাচ্চা তুলতে দেখে


রাফি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 

-"মানে কি!"

আমি বললাম,

-- ঝুম বৃষ্টির দিনে আমি যখন ছাতা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখন খেয়াল করি একটা মেয়ে নর্দমার ড্রেনে নেমে একটা কুকুরের বাচ্চাকে টেনে তুলছে। যে মেয়ে একটা কুকুরকে বাঁচানোর জন্য নোংরা নর্দমার ড্রেনে নামতে পারে সেই মেয়ে একটা মানুষের জন্য কতটা করতে পারে একটাবার ভেবে দেখেছিস?


রাফি আমার কথায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,

-" তুই তোর ডায়গল মার্কা কথা বন্ধ কর। আরে সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় ফিরবো। কলিংবেল বাজালে  সুন্দরী বউ দরজা খুলে যখন একটা মিষ্টি হাসি দিবে সেটা দেখে তখনি তো শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। কিন্তু তোর বউয়ের মতো যদি পেত্নী টাইপের কেউ দরজা খুলে তখন তো তারে দেখে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যাবে 


রাফির এমন অপমান জনক কথা শুনার পরেও আমি সাবলীল ভাবে হেসে ওরে বললাম,

-- ধর তুই খুব সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করলি।  সারাদিন পরিশ্রম করার পর বাসায় এসে ফিরে দেখলি তোর বউ তোর রুমে, তোর বিছানার মধ্যে অন্য একটা ছেলের বুকের উপর শুয়ে আছে।তখন তোর কেমন লাগবে? ২০২৩ সালে এসেও যদি একটা মেয়েকে তুই গায়ের চমড়া দিয়ে বিবেচনা করিস তাহলে এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে? সৌন্দর্য কিন্তু কখনোই স্থায়ী হয় না।  নিজের পরিহিত চকচকা আয়রন করা শার্টটাও একসময় মলিন হয়ে যায়। তাই চমড়ার রঙ না খুঁজে বরং চরিত্র খোঁজার চেষ্টা কর।  কারণ একজন চরিত্রবান স্ত্রী তোর জীবনটাকে সুন্দর করে তুলবে।  আর যদি টাকা পয়সার কথা বলিস তাহলে আমাকে একবেলা ভালোমন্দ খাওয়ানোর ক্ষমতা আমার শ্বশুরের আছে আর আমি তাতেই খুশি...


 আমার বলা সেদিনের কথা গুলো রাফি বুঝতে পেরেছিলো কিনা জানি না।  তবে সে বিয়ে করেছিলো খুব বড় লোকের  সুন্দরী মেয়েকে। বিয়ের পর রাফিকে ওর শ্বশুর সংসারে যাবতীয় যা যা লাগে ফ্রীজ, টেলিভিশন, এসি সব উপহার দিয়েছিলো।  কিন্তু দুঃখজনক বিষয়  হলো রাফির স্ত্রী বিয়ের  ৫দিন পরেই ওর প্রমিকের সাথে পালিয়েছিলো।  আর আরো দুঃখজনক বিষয় হলো একসময় রাফির শ্বশুর মেয়ের প্রেমিককে মেনে নেয় আর রাফিকে যে জিনিস গুলো উপহার দিয়েছিলো সেগুলো  ফিরত নেয়


 মাস তিনেক পর মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে রাফীর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। আমায় দেখে রাফি মাথা নিচু করে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিলো।  আমি কয়েকবার ডাকার পর ও আমার কাছে এসে মাথা নিচু করে বললো,

- "ভাই, দয়া করে লজ্জা দিস না। যদি পারিস  একটা চরিত্রবান মেয়ের সন্ধান দিস আমি চোখ বন্ধ করে বিয়ে করবো। মেয়ের গায়ের রঙও দেখবো শ্বশুরের টাকা পয়সাও দেখবো না


আমি তখন বললাম,

-- সে না হয় দেখবো, তা এখন যাচ্ছিস কোথায়?


রাফি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-" কোথায় আর যাবো নর্দমার ড্রেনের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবো যখনি দেখবো কোন মেয়ে ড্রেনে নেমে কুকুরের বাচ্চা তুলছে অমনি মেয়ের সামনে  হাতু গেরে বসে বললো,

 উইল ইউ ম্যারি মি"


রাফির এমন কথা শুনে আমি পাগলের মতো হাসতে লাগলাম আর রাফি একের পর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলো....

---

------


পাশের বাসার আন্টি  একটু উপহাস করে আমার মাকে  বললো,

-" ভাবী একটা কথা বলি কিছু মনে করেন না যে। সেদিন আমার মেয়ে বলছিলো আমাদের বাসায় যে নতুন কাজের মেয়েটা এসেছে সেই মেয়েটা যদি আপনার ছেলের বউয়ের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আপনার ছেলের বউকে মনে হবে কাজের মেয়ে আর কাজের মেয়েটাকে মনে হবে আপনার ছেলের বউ"


এই কথাটা বলে আন্টি এমনভাবে হাসতে লাগলো মনে হলো দুনিয়ার সেরা জোকসটা উনি বলেছেন।  আন্টির কথা শুনে মা শান্ত গলায় জবাব দিলো, 

-" ভাবী আপনার মনে আছে,  আপনার একবার হঠাৎ করে শরীর ভিষণ খারাপ করেছিলো? আপনার অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে বিছানায় প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন। আমি গিয়ে দেখি আপনার নিজের পেটের অতি সুন্দরী মেয়ে লিজা আপনার কাছে আসে নি। নাক মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে কাজের মেয়েটাকে বলেছিলো পরিষ্কার করতে। অথচ মাসখানের আগে আমার ভিষণ রকম পেট খারাপ করেছিলো।  আমি দিনে দুই-তিনবারের  বেশিও বিছানা নষ্ট করে ফেলতাম।  আমার ছেলের বউ তখন নিজ হাতে এইগুলো পরিষ্কার করতো আমায় নিজ হাতে গোসল করাতো। অথচ কাজের মেয়ে আমার বাসাতেও ছিলো।


আপনার মেয়েকে বলে দিবেন হতে পারে আমার ছেলের বউয়ের গায়ের রঙটা একটু কালো কিন্তু পরের মেয়ে হয়েও এই দুইবছরে আমার ছেলের বউ আমার যতখানি সেবা যত্ন করেছে সে ২৪ বছরের জীবনেও এতোটা সেবা যত্ন ওর নিজের জন্মদানকারী মাকেও করে নি..

---

-------


আমার স্ত্রী শ্রাবণী যখন চায়ের কাপটা আমার ফুফাতো বোনের হাতে দিলো তখম আমার ফুফাতো বোন ভ্রু কুচকে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বললো,

-" চা বানানোর আগে হাতটা কি ধুঁয়ে নিয়েছিলে?"

কথাটা শুনে আমার ছোটবোন জান্নাত সাথে সাথে বললো,

-"কেন আপা, তোমার কি মনে হচ্ছে ভাবী তোমাকে ময়লা হাত দিয়ে চা বানিয়ে দিয়েছে?


আমার ফুফাতো বোন তখন ঠোঁট বাকিয়ে বললো,

-"তোর ভাবীকে তোরা  যদি ১ঘন্টা ধরে ভিম সাবান দিয়ে ঘষামাজা করিস তবুও আমার মনে হবে তোর ভাবীর গায়ে ময়লা লেগে আছে "


সেদিন জান্নাত আমার ফুফাতো বোনকে কিছু বলতে পারে নি। অথচ প্রকৃতির কি সুন্দর নিয়ম। ফুফাতো বোনের বাচ্চা হওয়ার সময় জরুরী ভাবে Oনেগেটিভ রক্ত লাগে।  কোথাও রক্তের ব্যবস্থা হচ্ছিলো না।  আমার স্ত্রী শ্রাবণী তখন থাকে রক্ত দিয়েছিলো।  


সুস্থ হবার পর আমার ফুফাতো বোন যখন বাসায় ফিরে তখন জান্নাত সবার সামনে ফুফাতো বোনকে বলেছিলো,

- " তোমার চোখে আমার ভাবীর সারা গায়ে সারাক্ষণ ময়লা লেগে থাকে অথচ আজ সেই ময়লা মেয়েটার রক্তই তোমার শরীরের ভিতর ঘুরাঘুরি করছে।  সেদিনের অপমানের প্রতিশোধ সরূপ ভাবী যদি বলতো তোমায় রক্ত দিবে না তাহলে আজ তুমি এই দুনিয়ায় হেটে বেড়াতে পারতে না।  তাই আমার ভাবীর গায়ের রঙটাকে বড় করে না দেখে তার ভিতরের মহানুভবটাকে বড় করে দেখো....


মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে খেয়াল করি শ্রাবণী বিছানায় নেই। বেলকনিতে এসে দেখি শ্রাবণীর বেলকনির গ্রীল ধরে 

বাহিরে তাকিয়ে আছে।  আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,

--তোমার গায়ের রঙ কালো বলে সেজন্য তুমি মন খারাপ করো? 


শ্রাবণী হেসে বললো,

-"মোটেও আমি এজন্য মন খারাপ করি না। আল্লাহ তালা আমায় অন্য সবার মতোই অতি যত্ন করেই বানিয়েছেন।  আল্লাহতালা কারো মাঝে অপূর্ণতা রাখে না।  একদিকে না হলেও অন্যদিকে আল্লাহতালা ঠিকিই পুষিয়ে দেন। আমি কালো হয়েও স্বামী শ্বাশুড়ি ননদীর থেকে যে পরিমাণ  ভালোবাসা পেয়েছি ততটা ভালোবাসা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাও পায় নি...


আকাশে আজ পূর্ণ জোছনা।   বেলকনি দিয়ে সেই জোছনার আলো যখন শ্রাবণীর মুখের মাঝে পড়লো আমি তখন অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম,

এই মেয়েটা এত্তো সুন্দর কেন?


#রঙ


বিঃদ্রঃ- দয়া করে আমায় কেউ ভুল বুঝবেন না।  আমি এটা বলি নি ফর্সা মেয়েরা খারাপ হয়।  ভালো খারাপ সব চামড়ার মানুষরাই হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে এসেও মানুষ এখনো মেয়েদেরকে গায়ের রঙের উপর বিবেচনা করে।

Comments

Popular posts from this blog

Compare the Best WordPress Hosting Popular for WordPress

ICC Cricket World Cup 2023: A Spectacular Showcase of Cricket Excellence

মেয়েদের জুতা